বিশ্বের বেশির ভাগ সফল ব্যক্তির জীবনের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় যে তাঁরা আসলে খুব সহজেই এই সফলতার মুখ দেখেন নি। সফলতার দেখা পাবার জন্য তাদের অনেককেই কঠিন অগ্নিপথের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এবং নানা রকম প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই সমাজে আজ তাঁরা তাঁদের অবদানের জন্য স্বীকৃত ।
এখানে এমনই পাঁচজন ব্যক্তির সাফল্যের কাহিনী জানাব যাদের শুরুটা হয়েছিল ব্যর্থতার সাথে , কিন্তু এই ব্যর্থতা তাঁদের কাউকে দমিয়ে রাখতে পারেনি বরং লক্ষ্য মাত্রা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য তাদের প্রেরণা যুগিয়েছে।
১.আব্রাহামলিঙ্কন
১৮৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় সকল উদ্যোগেই আব্রাহাম লিঙ্কন ব্যর্থ হন। ১৮৩২সালে তিনি চাকরি হারান এবং সে সময় তিনি রাষ্ট্রীয় আইন পরিষদের জন্য অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন।
আব্রাহাম লিঙ্কন নিউ সারেমের একটি দোকানের অংশীদার ছিলেন ,যা ১৮৩৩ সালে ব্যর্থ হয়েছিল এবং তিনি অনেক বছর ধরে সেই দোকানের ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। ১৮৩৮ সালে তিনি স্থানীয় সরকার আসনের জন্য অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন । পুনরায় ১৮৪৩ সালে তিনি কংগ্রেসের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন । অবশেষে তিনি ১৮৪৬ সালে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন , কিন্তু পুনরায় ১৮৪৮ সালে তিনি তার পদ হারান।
এরপর ১৮৫৪ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে দুই বার পরাজিত হন এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন পেতেও ব্যর্থ হন। তবুও তিনি আরও একবার চেষ্টা করেন এবং ১৮৬০ সালে অবশেষে বহু কাঙ্ক্ষিত প্রেসিডেন্সি পদ জিতেনেন।
২। জে.কেরাওলিং
সেরা বিক্রিত বইয়ের তালিকায় থাকা “হ্যারিপটার” বইটির লেখক হচ্ছেন জে. কে রাওলিং । গ্রাজুয়েট হওয়ার পর বেশ কিছু দিন তিনি বেকার ছিলেন। তাঁর স্বামীর সাথে যখন তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, তখন তিনি মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন এবং একসময় আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন।
তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সচিব হিসেবে কাজ করার সময় তার মাথায় হ্যারিপটারের বইয়ের ধারণাটি এসেছিলো। কিন্তু এটি নিয়ে তিনি এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, চাকরিটা তিনি টিকিয়ে রাখতে পারেন নি।
হ্যারিপটার বইটি ১২ আগস্ট ব্লুমসবারি পাবলিশিং দ্বারা বিক্রিত হবার আগে ১২জন প্রকাশক দ্বারা বাতিল বলে গণ্য করা হয়। প্রথম হ্যারিপটার বইয়ের জন্য তিনি ২৫০০ পাউন্ড এর প্রথম চেক পেয়েছেন।
৩।স্টিভেনস্পিলবার্গ
ডি সলেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন স্টিভেন স্পিল বার্গ। সঠিক ভাবে পড়তে না পারার কারণে তাঁকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তাঁর শিক্ষকেরা মনে করেছিলেন যে তিনি একজন অলস ছাত্র।
স্পিল বার্গ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া স্কুল অফ সিনেমেটিক আর্টস ইউনিভার্সিটির জন্য চেষ্টা করেন । কিন্তু উনি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। আর এখন ?সেই প্রত্যাখ্যাত হওয়া আর ডিস লেক্সিয়া রোগে ভোগা স্টিভেন স্পিল বার্গ আজ স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা । এখন তার ঝুড়িতেই . টিঃ দ্যা এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল,ইন্ডিয়ানা জোন্স এর মতন চলচ্চিত্র আছে যেগুলো এখন এক একটি বিলিয়ন ডলারের ও বেশি মূল্যবান।
৪। সোইচিরোহোন্ডা
সোইচিরো হোন্ডা তাঁর পিস্টন রিং এর নমুনা উপস্থাপনের মাধ্যমে টয়োটা কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। দুই বছর পর নতুন ডিজাইন তৈরি করার পর,তিনি শেষ পর্যন্ত টয়োটা কোম্পানির সাথে একটা চুক্তি করতে সমর্থ হন।
সোইচিরো টয়োটার সাথে তাঁর চুক্তি পূরণের জন্য একটি কারখানা তৈরি করেন ,কিন্তু যুদ্ধের সময় পরপর দুইবার এটি বোমাবিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি তাঁর উৎপাদন কারখানা পুনর্নির্মাণ করেন ,কিন্তু এটি আবারও ভূমিকম্পের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়।
তিনিসাইকেলেরজন্য একটি ছোট ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন এবং সেটি সাইকেলের সাথে জুড়ে দেন। পরবর্তীতে এটিই পৃথিবীতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করে।
৫। ওয়াল্টডিজনি
ওয়াল্ট ডিজনি কে যথেষ্ট সৃজনশীল না হওয়ার কারণে একটি পত্রিকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
ওয়াল্ট ডিজনি ১৯২১ সালে তাঁর প্রথম অ্যানিমেশন কোম্পানি তৈরি করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তা দেউলিয়া হয়ে যায়। ১৯২৬ সালে ডিজনি “ওসওয়াল্ড দ্য র্যাবিট” নামক একটি কার্টুন চরিত্র তৈরি করার জন্য অগ্রসর হয়।
১৯২৭ সালে এম জি এম জানায় যে মিকি মাউসের জন্য তাঁর ধারণা কখনোই কাজ করবেনা,কারণ একটি ইঁদুরের বিষয়টিভয়ের ছিল। ১৯৩৩ সালে থ্রি লিটল পিগ বিতর্কিতদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল । তারা মনে করে ছিলেন যে ডিজনির কাছে আকর্ষণ করার মত যথেষ্ট চরিত্র নেই। পরে সেই কার্টুনটি সফল হয়ে ওঠেসুপরিচিত কার্টুন পিনোকিউ হিসেবে,যা প্রথম রিলিজেই মিলিয়ন ডলার আয় করে।
সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, যারা মনে প্রাণে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য লেগে থাকেন, তাঁরা কখনো কোনো ব্যর্থতায় এক পাও পিছিয়ে না পড়ে আরও দ্বিগুণ উদ্যমে এগিয়ে চলেন। আর তখনই তারা সফল মানুষে রূপান্তরিত হন।
[ https://factsc.com/famous-people-struggle/ ]