জীবনেযখন একঘেয়েমি চলে আসে তখন যেকোনো কাজে সম্পূর্ণ মন দেয়টা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।চারপাশের বিশৃঙ্খলা, সমস্যা, উচ্চমানের চাহিদা জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলতে পারেএবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। এগুলোই আপনাকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে যথেষ্ট।আর তাই প্রয়োজন নিজেকে নিজের মধ্যে পুনরায় সংস্থাপন করা।
এই মুহূর্তে আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, “নিজেকেনিজেরমধ্যেপুনরায় সংস্থাপন কথাটির মানে কি?” সংস্থাপন বা রিসেট শব্দটি প্রযুক্তি পণ্যের ক্ষেত্রে শুনে থাকবেন। সেখানে রিসেট মানে হচ্ছে পুনরায় শুরু থেকে শুরু করা। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা বলছি মনের আবেগের ক্ষেত্রে নিজেকে পুনরায় সংস্থাপন করা। আপনিযখন চারপাশের সকলকিছুর চাপে চিড়েচ্যাপটা হয়ে যাচ্ছেন, তখন অন্য সবকিছু থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন।উপলব্ধি করুন আপনার অস্তিত্বের কথা। এখানে অন্য সকল কিছু বাদ দিয়ে আপনি শুধু ‘আপনাকে’নিয়েই চিন্তা করবেন। চিন্তা করুন কে আপনি?এটি হচ্ছে আপনার শুরুর জায়গা। এখান থেকে আবার নতুন করে শুরু করুন।এতে করে আপনি নিজের মধ্যে শক্তি ফিরে পাবেন।দেখবেন আপনি নিজের অস্তিত্ব অনুভব করতে সক্ষম হচ্ছেন।
আজআমরাকিছু প্রক্রিয়ার নাম উল্লেখ করছি, যা আপনাকে নিজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে বেশ সহায়তা করবে।
১।খুব কাছের বন্ধু বা সঙ্গীরসাথে খোলামেলা আলোচনা করুন
মানুষের বন্ধু-বান্ধব অনেক পরিমাণে থাকে। কিন্তু কাছের মানুষ খুবই কম থাকে, যাদের সাথে সবকিছু অকপটে ভাগ করা যায়। মনে যখনই অস্বস্তি বোধ করবেন তাদের কাছে চলে যান। তাদের সাথেমন খুলে কথা বলুন। তাদের পরামর্শ নিন। কিছু কিছু সময় আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় যখন আমাদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা সাময়িকভাবে হারিয়ে যায়। দেখবেন, যখনই কাছের মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলছেন তখনই মনে একটি শান্তির হাওয়া বয়ে যেতে শুরু করবে। নিজেকে হালকা মনে হবে এবং নিজের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাও ফিরে পাবেন। এভাবে আপনি নিজের মনে প্রাণ ফিরে পাবেন।
২।নিজের সিম্পর্কে লিখুন
প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও নিজের সম্পর্কে কিছু লিখার চেষ্টা করুন। আজ আপনি কি কি সমস্যায় পড়েছেন, কি কি ভুল করেছেন, কিভাবে সেগুলো শুধরেছেন, আপনারদুর্বল দিক এবং সামর্থের দিকগুলো সম্পর্কে লিখতে থাকুন। এভাবে যত লিখবেন, নিজেকে আরও বেশি নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন।
৩।কোথাওথেকে বেড়িয়ে আসুন
নিজের সাথে সংযোগ স্থাপনের আরেকটি ফলপ্রসূ উপায় হচ্ছে বেড়াতে যাওয়া। আপনি যখন আপনার প্রতিদিনকার পরিবেশ থেকে বের হয়ে নতুন কোনো পরিবেশে পা বাড়ান, তখন সেখানকার পরিবেশের প্রতিই আপনার পুরো মনোযোগথাকে। সেখানে আপনি নতুন কিছু অনুভব করতে পারবেন। আর এরকম পরিবেশই হচ্ছে নিজেকে নিয়ে ভাবার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। শান্ত হয়ে নিজের কথা ভাবা যায়। নিজেকে বেশি করে উপলব্ধি করা যায়।
৪।সকালে বা সন্ধ্যায় একা একা হাঁটুন
প্রতিদিন বা যেদিনই সময় পাবেন সকাল বা সন্ধ্যায় একা একাকিছু সময়হাঁটুন এবং নিজের কথা ভাবুন। এসময় অন্য সব চিন্তা ঝেরে ফেলুন, সেটিহোকপারিবারিক বা কর্মক্ষেত্র সম্বন্ধীয়। শুধুই নিজেকে নিয়ে ভাবুন।
৫।যেকোনো ধরণের প্রযুক্তি থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকুন
মোবাইল,লেপটপ, টেলিভিশন এগুলো মানুষের জীবনের বিরাট একটি সময় কেড়ে নেয়। এগুলো তেমন কোনো সুখও এনে দিতে পারে না। তাই কিছুটা সময় স্বস্তিতে থাকতে চাইলে এগুলোর কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। দেখবেন একটি চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারছেন।
৬।পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
কাজের চাপে ঘুম যদি কম হয়ে যায় তাহলে আপনার ব্রেইন তা মেনে নিতে পারবে না। আর তখনই সে উল্টোপাল্টা কাজ করতে শুরু করবে। একটি ঘরি চলতে যেমন তাতে ব্যাটারি দিতে হয়, তেমনি ব্রেইনকে চলতে হলে তার বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।আর এই ব্রেইন তখনই বিশ্রাম পায় যখন আপনি ঘুমান। ব্রেইন যদি সচল থাকে তাহলে আপনিও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকবেনএবং বেশকিছু রোগ থেকেও দূরে থাকবেন।
৭। যোগাসন করুন
যোগাসন বা মেডিটেশন খুব অল্প সময়ে আপনার মনে শান্তি এনে দিতে পারে। এটি আপনাকে গভীর ভাবনায় ডুব দিতে সাহায্য করবে। আর সেই ভাবনাটি অবশ্যই শুধু নিজেকে নিয়ে। দিনে ৩০ মিনিটেরযোগাসন আপনাকে সারাদিনের জন্য সচল রাখতে সক্ষম।
এই সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই নিজেকে খুঁজে পেতে পারেন। মানুষ তখনই জীবনে উন্নতি করতে পারে যখন সে নিজেকে জানতে পারে।
http://www.thesuccessfulgrownup.com/categories/happiness/item/10-ways-to-reconnect-to-yourself#.Wp0Ea4FDbqD