ধরুন, একটি জনশূন্য বনে হঠাৎ একটি গাছ ভেঙে পড়লো। তাহলে কি এটি কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার সৃষ্টি করলো? না।
এবার ভাবুন, সেই বন আর জনশূন্য নয়। সেখানে অনেক মানুষের বসতী আছে। আপনিও তাদের মধ্যে একজন। এবার কিন্তু গাছ ভেঙে পড়ার ব্যাপারটি একটি ঘটনায় বা দুর্ঘটনায় মোড় নিয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মানুষ। মানুষ এ ব্যাপারটি সম্পর্কে জানতে পেরেছে, গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ শুনতে পেয়েছে।তাই এটি একটি ঘটনা। কিন্তু ধরুন, আপনি শুনতে পাননি। কারণ আপনার বাড়িটি বনের একেবারে শেষ প্রান্তে। যখন আপনি সবার মাঝে ফিরে যাবেন, তাদের সাথে কথা বলবেন তখনই সেই গাছ ভেঙে পড়ার ব্যাপারটি জানতে পারবেন। সেই মুহূর্তে বনে গাছ ভেঙে পড়ার ব্যাপারটিই হবে প্রধান খবর। তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবে, যেমন: কার কি ক্ষতি হয়েছে, গাছ ভেঙে পড়ার পর তাদের কি করা উচিৎ ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন ভাবুন একবার, আপনি দূরে থাকা সত্ত্বেও কিন্তু এই সংবাদটি থেকে দূরে থাকতে পারেন নি।
কোনো একটা সংবাদ বা খবর কখনো পুরোপুরিভাবে হাওয়া হয়ে যায় না। এর কিছু রেষ থেকেই যায়।
তাহলে এবার আসা যাক, আপনি যদি গত ৩০ দিনের কোনো সংবাদ থেকে দূরে থাকেন তা হলে কি হতে পারে।
প্রথমেই বলতে হবে আপনি অন্যদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকবেন। আপনি হয়তো চান সংবাদপত্রে প্রকাশিত রাজনীতি, খুন, রাহাজানি এসব সংবাদ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি কি বালিতে মাথা ঢুকিয়ে চারপাশের ঘটে যাওয়া সব ঘটনাগুলো থেকে নিজেকেই নিজে বঞ্চিত করছেন না? এতে করে হয়তো আপনি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনতে পারেন।একটা উদাহরণ দিলে সহজ হয়ে যায়। ধরুন, আপনি একজন ‘ব’ দেশের নাগরিক।প্রতিজ্ঞা করেছেন আগামী ৩০ দিনের কোনো সংবাদ আপনি শুনবেন না। সংবাদপত্র তো নয়ই, এ জাতীয় কোনো কিছুই আপনি ছুঁয়ে দেখবেন না। এমনকি অন্য কারও কাছ থেকেও আপনি কোনো সংবাদ পেতে চান না। তো,হঠাৎ ‘ব’ দেশের সরকার কোনো একটি অতি গুরুতর ব্যাপারে দেশে কারফিউ জারি করে দিয়েছে। অথচ সেটি আপনি জানেন না। তাই হয়তো এই কারফিউর মধ্যেই না জেনে আপনি বের হলেন কিছু সদাই করতে! সুতরাং, এরপরে কি হতে পারে সেটা না হয় নিজেই কিছুটা আন্দাজ করে নিন।
এবার আসুন, ধরে নেই আপনি ঠিকই কোনরকম সমস্যা ছাড়াই ৩০ দিন উতরে গিয়েছেন। কিন্তু যখনই জনসমক্ষে বের হবেন (ওই ‘ব’ দেশের কথাই ধরুন) চারপাশে একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তাই প্রথমেই আপনি কিছুটা অবাক হবেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগবে কি হয়েছে। তখন অন্যের কাছে তা জানতে চাইবেন। এই জানতে চাওয়াটাই হচ্ছেমানুষের স্বভাব! এর মানে হচ্ছে আপনি ইচ্ছা করলেও কোন সংবাদের কাছ থেকে খুব বেশিদিন দূরে থাকতে পারবেন না। তারপর যখন জানতে পারলেন যে দেশে এরকম একটা পরিস্থিতি চলছে তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি আঁতকে উঠবেন এবং কি হতে কি হয়েছে তা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবেন। তাই এখন আবার সেই প্রথম থেকেই আপনাকে সব জানতে হবে। তাহলে এই যে ৩০ দিন কোনো সংবাদ থেকে দূরে আপনি দূরে থেকেছেন, তাতে কি আদৌ কোনো লাভ হলো?
এবার আমাদের এই সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে আসা যাক। এই যুগে আপনি সংবাদপত্র না পড়েও দিন কাটিয়ে দিতে পারেন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই সংবাদগুলো প্রতিনিয়ত ঘোরাফেরা করে। আবার যখন আপনি ঘরের বাহির হবেন, দেখবেন অন্যদের মুখেও কিছু সংবাদ ঘোরাফেরা করছেই।
কিন্তু সব কিছুর মোদ্দা কথা হচ্ছে, সংবাদপত্র পড়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আপনি যদি অন্যদের থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকতে চান, তাহলে আপনাকে সংবাদপত্র পড়তেই হবে। শুধু দেশ-বিদেশের সংবাদ জানার জন্যই মানুষ সংবাদপত্র পড়ে না। মানুষ তার নিজের জন্যই সংবাদপত্র পড়ে। তার আশেপাশে কি ঘটছে, সেটা ভাল নাকি খারাপ সে সম্পর্কে জানতেই হবে। খারাপ কিছু ঘটতে থাকলে তাকে অবশ্যই কিছু সতর্কতা নিয়ে চলতে হবে। আর এটিই আপনাকে সমাজে চলতে সাহায্য করবে।
চলুন এবার দেখা যাক, যদি আপনি গত ৩০ দিন সংবাদপত্র না পড়েন তাহলে কি ধরণের উপকারিতা পাবেন। একটি উপকারিতা হচ্ছে আপনার কিছু সময় বাঁচবে। আরেকটি হচ্ছে আপনি সমাজের বিশৃঙ্খল কিছু সংবাদ জানা থেকে মুক্তি পাবেন এবং নিজের মনে শান্তি খুঁজে পাবেন। এর থেকে খুব বেশি উপকারিতা আপনি হয়তো খুঁজলেও পাবেন না।
তাই সংবাদ পত্র পড়ুন। নিজেকে আপডেট রাখুন। ওয়ারেন বাফেট দিনে ছয়টি সংবাদপত্র পড়ে থাকেন। উনি নিশ্চয়ই বাজে কাজে সময় নষ্ট করেন না।