প্যাশন আর প্রোফেশন, এই শব্দগুলোর সাথে অনেকেই খুব ভালো করে পরিচিত। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যটি সম্পর্কে খুব একটা সচেতন না। বিশেষ করে কিশোর কিশোরীরা অল্প বয়সে প্রোফেশন কথাটি শুনে থাকলেও, প্যাশন কথাটির সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের সকলের উচিৎ তাদের এই দুইয়ের মাঝের পার্থক্যটি ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া, যাতে করে ভবিষ্যতে তারা নিজদের প্যাশন এবং প্রোফেশনটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারে।
কিন্তু আমরা যারা প্যাশন আর প্রোফেশন সম্পর্কে জানি, তারা কতটুকু এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে শিখেছি বা জানি? এমন অনেকেই আছেন যাদের প্যাশন আর প্রোফেশন সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ অনেকেই মনে করেন, তার যে প্যাশনটি রয়েছে, তা যদি প্রোফেশন হয়ে যায় তাহলে প্যাশনটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার অনেকে এও ভেবে থাকেন যে, প্যাশনকে প্রোফেশনে নিলে ভালো আয় হবে না। তাই প্যাশনকে এক দিকে রেখে, অন্যদিকে প্রোফেশনকে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
কারণগুলোতে যুক্তি আছে বইকি। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন যে, আপনি যদি আপনার প্যাশনটিতে শতভাগ মনোযোগ দিতে পারতেন, তাহলে সেটির ফলাফল কতটা সুন্দর হতো? আর এই ফলাফলটি যে আয়েরও একটি ভালো উৎস হয়ে যেতে পারে, তাও কি কখনো ভেবে দেখেছেন? কিছু উদাহরণ দেখালে হয়তো বুঝে যাবেন তাড়াতাড়ি।
একজন চিত্রশিল্পীর প্যাশন হচ্ছে ছবি আঁকা। কিন্তু তিনি তার এই প্যাশনটিকেই তার প্রোফেশনে নিয়ে যেতে পারেন। এই প্যাশনের মাধ্যমেই তিনি আয় করতে পারেন। এবং সেসব আয় কিন্তু নেহাত কম নয়। এবার একেবারে সাধারণ পর্যায়ে যাই। ধরুন, একজন ছাত্রের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হলো ইংরেজি। এটিও কিন্তু একধরণের প্যাশনই বটে। কিন্তু প্রোফেশন বাছাইয়ের জন্য তাকে পড়তে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং। মানে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে তাকে টাকা রোজগার করতে হবে। এতে করে সে হয়তো ইংরেজি বিষয়টিকে আরও গভীরভাবে জানতে পারবে না। অন্যদিকে সে ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিকেও পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারছে না। কারণ এটি তার মনে ধরছে না। এসব কারণে সে দুই দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু যদি অন্যরকমটি হতো? যদি সে ইংরেজি নিয়েই পড়াশোনা করতে পারতো, তাহলে সে এ বিষয়ে অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে থাকতো এবং এই ইংরেজি বিষয়কে ঘিরে যে সকল প্রোফেশন আছে, সকল দিকেই সে উন্নতি করতে পারতো।
তাই প্যাশন আর প্রোফেশন এক হয়ে গেলে যে প্যাশন নষ্ট হয়ে যাবে, এ কথাটি সামান্যতম হলেও ভুল প্রমাণ করতে পেরেছি আমরা।
তবে সব প্যাশনই কিন্তু প্রোফেশনে নেয়া যায় না। যেমন ধরুন গল্পের বই পড়া। বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়, কিন্তু টাকা নয়। তাই সবার প্রথমে প্যাশনকে বুঝতে চেষ্টা করুন। প্যাশনকে প্রোফেশনে নেয়ার কোনো উপায় আছে কিনা ভেবে দেখুন।
চলুন তাহলে এবার আপনাদের জন্য কিছু টিপস দিয়ে দেয়া যাক, যা দিয়ে আপনি প্যাশনকে প্রোফেশনে নেয়ার জন্য অগ্রসর হতে পারেন।
১। আপনার প্যাশন খুঁজে বের করুন
অনেকেই নিজের প্যাশন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না। তাই সঠিক প্যাশনটি খুঁজে বের করুন। আপনি সত্যিই কি পছন্দ করেন সেটি বের করুন। এ জন্য নিজেকে প্রয়োজনীয় সময় দিন।
২। এটি কি ভবিষ্যতে অর্থ উপার্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম?
প্যাশন খুঁজে পেলে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে ভবিষ্যতে আপনার প্যাশনটিকে প্রোফেশনে নেয়া যায় কিনা তা বুঝতে চেষ্টা করা। হুট করেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া বোকামি। তাই আপনার প্যাশনটি সত্যিই সময়োপযোগী কিনা এবং ভবিষ্যতে অর্থ উপার্জনে কতটা সহায়ক তা ভেবে দেখুন। তারপর দৃঢ় পদক্ষেপ নিন।
৩। প্যাশনকে নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী
নিজের প্যাশনের প্রতি নিজের বিশ্বাস থাকাটা জরুরী। আপনি যদি প্যাশনের প্রতি আশাবাদী না হোন, তাহলে সেটিকে নিয়ে আর এগোতে পারবেন না। তাই বুঝে নিতে চেষ্টা করুন, আপনার প্যাশনকে নিয়ে আপনি কতটুকু স্বপ্ন দেখতে পারছেন।
৪। ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতেই হবে
প্যাশনকে নিয়ে সামনে এগোতে গেলে সেই পথটি যে খুব মসৃণ হবে সেটা না ভাবাটাই ভালো। নতুন কিছু নিয়ে সামনে এগোলে তা প্রথমে ব্যর্থতার মুখ দেখবেই। কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলেই একসময় আলো দেখতে পাওয়া যাবে নিঃসন্দেহে।
https://www.success.com/article/5-steps-to-turn-your-passion-into-your-profession