শিষ্টাচার একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাল আচার আচরন অনেক ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে বিভিন্ন আচার ব্যবহার শিখতে হয়। পরিবেশ অনুযায়ী, বয়স অনুযায়ী আমাদের এই আচার আচরন পরিবর্তিত হয়। পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন সবকিছুতেই আমাদের আচার আচরন মেনে চলতে হয়। খাবার টেবিলে, খেলার মাঠে, বাথরুম কিংবা কোন অনুষ্ঠানে সবজায়গায় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে যা আমাদের সকলের মেনে চলা উচিত। এখন যেহেতু ভারচুয়াল জগতে আমরা সবাই বিচরণ করি সেখানেও কিন্তু আমাদের ভদ্রতা বজায় রাখা উচিত। আমরা আজকে বেশ কিছু আচার পদ্ধতির টিপস নিয়ে জানব যেগুলো আমাদের মেনে চলা উচিত। যার ফলে আমরা একটি ভাল প্রভাব ফেলতে পারব।
১। পারিবারিক সময়ঃ আমরা দিনশেষে নিজেদের ঘরে ফিরে আসি আপনজনদের কাছে। এই সময় আমরা অনেক ক্লান্ত থাকি। কিন্তু তাই বলে এখানে বেশ কিছু ব্যাপার আছে যা আমাদের মেনে চলা উচিত। পরিবারকে অবশ্যই সময় দিন। বাইরে থেকে এসেই মোবাইল নিয়ে বসবেন না। বাবা মা, ভাই বোন, সন্তানদের সময় দিন। বাইরে থেকে এসে সবার খোঁজ নিন। অন্তত পাঁচ মিনিট গল্প করুন।
২। খাবার খাওয়ার আচরনঃ খাবার খাওয়ার মধ্যেও বেশ কিছু নিয়ম আছে। যেমনঃ
- সবার খাবার পরিবেশনের পড়ে খাওয়া শুরু করুন। আপনার খাবার আগে আসলে একটু অপেক্ষা করুন।
- খাবার টেবিলে শুধু খাবার নিয়ে মেতে থাকুন। খাবারের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন বিষয় এরিয়ে চলুন। মোবাইল ফোন অবশ্যই দূরে রাখুন। এমনকি চাবির গোছা, সানগ্লাস, ছোট ব্যাগ ইত্যাদিও টেবিলের উপর রাখবেন না।
- মোবাইল ফোনে কাউকে ম্যাসেজ দিবেন না খাওয়ার সময়। ফেসবুকিং, ছবি দেখা বা তোলা ইত্যাদি এরিয়ে চলুন। খাবার খাওয়াকে উপভোগ করুন।
- লেবু চিপার সময় হাত দিয়ে ঢাকুন যেন অপরের গায়ে না ছিটকায়।
- অবশ্যই মুখ বন্ধ করে খাবার চিবান। মুখে খাবার নিয়ে কথা বলবেন না। এমনকি খাবারের সামনে হাঁচি কাশি দিবেন না। মুখে হাত দিবেন।
- রুমাল বা টিস্যুতে মুখ মুছে পানি পান করুন।
- খাবার নেওয়ার সময় খুব তাড়াহুড়া কিংবা অতি ধীরভাবেও কাজ করবেন না। অতিরিক্ত খাবার নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- খাবার বাটি বাম দিক থেকে সারভ করুন।
- কোন দাওয়াতে গেলে খালি হাতে যাবেন না।
৩। কর্মক্ষেত্রে আচরনঃ কর্মক্ষেত্রে আচরন মানা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, চলতে হয়।
- আপনার বসকে সম্মান করুন। বসের সামনে ফোন না ধরার চেষ্টা করুন।
- অফিসিয়াল ইমেইল যেকোনো সময় করা যেতে পারে। তবে মোবাইলে অফিসিয়াল ম্যাসেজ দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।
- অফিসে নতুন কারো সাথে পরিচয় হলে তার কাজের পদবি অনুযায়ী সম্বোধন করুন। যেমন জি এম ফারুক সাহেব, এডমিন অফিসার আখতার এভাবে।
- কর্মক্ষেত্রে ফোন সাইলেন্ট রাখুন।
- কলিগদের সাথে কোথাও গেলে গাড়িতে প্রথমে উঠুন। যেন আপনি আগে সরে বসতে পারেন এবং পর্যাপ্ত জায়গা রাখবেন।
- সময় মেনে চলুন
- পোশাক ব্যবহারে সচেতন হন। অফিসে এমন পোশাক পড়বেন না যেটা লোকের বিরক্তি কিংবা হাস্যরসের পাত্র হন। মার্জিত, পরিপাটি এবং পরিষ্কার পোশাক পড়ুন। শুধু পোশাক নয়, আপনার অন্যান্য জিনিস যেমন চশমা, ব্যাগ, মোবাইল কভার সবকিছু রুচিসম্মত হওয়া চাই।
৪। ভারচুয়াল জগত এবং অন্যান্যঃ এখন আমরা সবাই কমবেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করি। অবশ্যই এখানেও কিছু নিয়ম রীতি আছে।
- কি পোস্ট করছেন অবশ্যই খেয়াল রাখুন।
- সময় দেখে কাউকে নক দিবেন। এবং অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন অপরপক্ষ বিরক্ত না হয়।
- পাবলিক স্থানে যেমন অপেক্ষাগার, বাস, বাজার ইত্যাদি জায়গায় মোবাইলে জোরে কথা বলবেন না।
- মোবাইল রিংটোন রুচিসম্মত রাখুন।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অফিসের বসদের সাথে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন করতে যাবেন না।
- অনুমতি ছাড়া ওয়াই ফাই ব্যবহার করবেন না।
- কারো সাথে কথা বললে হাসি মুখে বলুন। এবং সানগ্লাস চোখ থেকে খুলে তার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।
- কারো বেক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখাবেন না।
উপরের বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারন এসব আচরন দিয়ে সাধারনত মানুষকে বিচার করা হয়। তাই এইসকল নিয়ম মেনে চলা উচিত।
তথ্যসূত্রঃ https://www.rd.com/advice/relationships/etiquette-rules/
http://etiquetteprinciples.com/blog/elementary-school-etiquette/
https://www.fabhow.com/how-to-develop-good-manners.html